আগেই গুঞ্জন ছিলো, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সদস্যপদ হারাচ্ছেন জায়েদ খান। তবে সেটি যে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য, নির্মাতা-প্রযোজক-সাংবাদিকদের বনভোজনে ডেকে নিয়ে ঘটা করে ঘোষণা দেওয়া হবে, এমনটা আশা করেননি সম্ভবত কেউ। শনিবার ঢাকার অদূরে বনভোজন মঞ্চে সমিতির এজিএম ডাকা হয়। সেখানে সবার উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জানান, সমিতির খাতা থেকে জায়েদ খানের ভোটাধিকার ও সদস্যপদ বাতিল করা হলো। কারণ তিনি, সমিতিসহ সাধারণ সম্পাদকের (নিপুণ আক্তার) নামে মিথ্যা, মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ কল্পকাহিনি- সাংবাদিক সম্মেলন, ইউটিউব, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে আসছেন। সেই অপরাধে গত ০২/০৪/২০২৩ তারিখের সমিতির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। এমন খবরে জায়েদ খানের প্রতিক্রিয়া কী? সেটি জানতে চাইলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘দেখুন আমি এই সমিতির তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। অথচ বনভোজনের দাওয়াতই পেলাম না। উল্টো শুনতে হলো আমার নাকি সদস্যপদ বালি করা হয়েছে! সত্যি বলতে আগেও বলেছি বহুবার। এখনও বলছি, এই অবৈধ ব্যক্তির অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। আমি যা করার সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই করেছি এবং করবো।’ এরমধ্যেই শিল্পী সমিতির নির্বাচনী প্যানেল নিয়ে ঢালিউডে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। মিলছে দল-বদলের খবর। নাম আসছে জায়েদ খানেরও। এমন পরিস্থিতিতে, নির্বাচনমুখি নেতা জায়েদ খানের বিপক্ষে সাংগঠনিক এই সিদ্ধান্তটি বিস্ময়কর না হলেও বিব্রতকর বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, গত নির্বাচনের পর টানা প্রায় এক বছর নিপুণ-জায়েদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়েই পার করেছে সমিতি। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। অবশেষে গেল এক বছর অনেকটাই থিতু হয়েছে সমিতি। যদিও সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ছিলেন অনেকটাই নির্বিকার।
জায়েদ খানের প্রতি প্রশ্ন ছিলো, কেন নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্ত এলো আপনার বিপক্ষে। বললেন, ‘কেন এসেছে সেটা তো শিশুও বলতে পারবে। একজন অবৈধ দখলদার যা চাইবে তাই করতে পারে। কারণ, তার তো ভোটারদের কাছে জবাবদিহি নেই। ভোটে তো আমিই জয়লাভ করেছিলাম। অথচ দখল করলো আরেকজন (নিপুণ)। যাইহোক, গত এক বছর তো এটা নিয়ে আমি ভাবিইনি। ব্যস্ত আছি নিজের শুটিং নিয়ে। ঈদে সিনেমা আসছে। সেদিকে এখন আমার মূল নজর। অথচ এরমধ্যে আবারও অবৈধ ব্যক্তি তার অবৈধ ক্ষমতা দেখালো। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এই সমিতির। এটা আমার প্রাণের সংগঠন। এই সংগঠন ও সংবিধানের প্রতিটি লাইন আমার মুখস্ত। আমি একজন সাংগঠনিক ছেলে। আমি জানি, কোনটা সংগঠন বিরোধী আর কোনটা ব্যক্তি বিরোধী। শুরু থেকেই আমার অভিযোগ একজন ব্যক্তি ও তার অবৈধ কার্যক্রম নিয়ে। কোনও ব্যক্তি যদি অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে কি কেউ কথা বলতে পারবে না? ব্যক্তির দায় তো সংগঠনের নয়। আমি তো সংগঠনের বিরুদ্ধে কখনও কিছু বলিনি। তাহলে কেন সংগঠনবিরোধী বক্তব্যের দায় তুলে আমার সদস্যপদ বাতিল ঘোষণা করলো? আর কাউকে বাতিল করতে হলে তো তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে অন্তত তিনবার। আমি একটি চিঠি পেয়েছি। সেটার জবাবও দিয়েছি। আর কোনও চিঠি আসেনি। আসলে এরা (নিপুণ আক্তার) তো সংগঠনের সংবিধানই পড়েনি। জানে না, সংগঠনের বিধি-বিধান। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বনভোজনে গিয়ে এজিএম ডেকে আমাকে বাতিল করছে! অবৈধদের আসলে বৈধ বোধ থাকে না। আবারও প্রমাণ হলো।’ জায়েদ খান জানান, আসন্ন নির্বাচনে যেন তিনি না দাঁড়াতে পারেন, সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিপুণ আক্তার। তবে তিনি এর জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান। শনিবারের এই বিচ্ছেদী খবর আসার আগে জায়েদ খান বেশ ফুরফুরে সময় পার করছিলেন। আজকাল যাই করছেন, হচ্ছেন ভাইরাল। এরমধ্যে ঘোষণা দিলেন ঈদে শাকিব খানের সঙ্গে লড়াইয়ের! বহুদিন পর মুক্তি দিচ্ছেন সিনেমা ‘সোনার চর’। এমন সুসময়ের ভেতরে অনেকটা আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা- সদস্যপদ বাতিলের খবরটি। বলা দরকার, শনিবার ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বনভোজন