জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে সিট দখল করে বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে পোষ্যদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে পোষ্য কোটায় ভর্তি শিক্ষার্থীদের থাকার নিয়ম নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্যমতে, জাবিতে ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৫৭৯ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৩১৩ জন পোষ্য শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। তবে তাদের কারও হলে থাকার নিয়ম না থাকলেও বেশিরভাগ পোষ্যরা ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে হলে থাকছেন। এদের মধ্যে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ খান শিমুল, দফতর সম্পাদক বাবুল হোসেন রনি, উপ-দফতর সম্পাদক হাসিবুর রহমান, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শান্ত মাহবুব, সহ-সম্পাদক মেহেদী হাসান, সদস্য মো. তামিম হোসেন প্রমুখ রয়েছেন। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক হাবিবুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের আসন বণ্টন ও নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই দায়িত্ব হল প্রশাসনের হলেও তারা কোনো ভূমিকাই পালন করেন না। বরং ‘ছায়া প্রশাসনের’ ভূমিকায় থাকে ছাত্রলীগের নেতারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলে থাকার জন্য এবং কক্ষে সিট পেতে ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইদের’ কাছে তাদের ধরনা দিতে হয়। আর হলের আসন সংকটকে পুঁজি করে ছাত্রদের ওপর নানা অত্যাচার চালান ছাত্রলীগ নেতারা। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ম্যানার (আচার-আচরণ) শেখানোর নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, সাংবাদিক ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের অন্তত দেড় শতাধিক পদধারী নেতার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলেও হলে সিট দখল করে রেখেছেন তারা। তাদের অনেকেই চারজনের সিটের একটি কক্ষে দুজন, দুজনের কক্ষে একজন করে থাকছেন। কোনো কোনো হলে চারজনের কক্ষে একজন করে থাকেন। অবৈধভাবে অবস্থান করা এসব শিক্ষার্থীর চাপ পড়ছে বৈধ শিক্ষার্থীদের ওপর। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জায়গা হয়েছে গণরুমে। এক কক্ষের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকছেন ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী। এতে পড়াশোনাসহ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে আসন সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের সশরীরে ক্লাস আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অছাত্র, বহিষ্কৃত ও পোষ্য কারোরই আবাসিক হলে থাকার নিয়ম নেই। একাধিকবার হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলেও যারা এখনো অবৈধভাবে হলে থাকছে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ