মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের ওপর আমি তোমাকে রক্ষক হিসেবে প্রেরণ করিনি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮০)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস ও সুন্নত কোরআনে কারিমের পর শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস ও দলিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত, তাঁর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদিস বা সুন্নাহ বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজের মাধ্যমে কোরআনের ব্যাখ্যা করেছেন। সেগুলোই মূলত হাদিস বা সুন্নাহ।পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে হাদিস ও সুন্নাহ মেনে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে এমন কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো—
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ফায়সালা মেনে নিতে মুমিনরা বাধ্য : হাদিস হলো মহানবী (সা.)-এর ফায়সালা। আর মুমিনরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ফায়সালা মেনে চলতে বাধ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে ফায়সালা করে দিলে কোনো মুমিন নর-নারীর জন্য সে বিষয়ে নিজস্ব কোনো ফায়সালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬)
কথা ও কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আগে বাড়া নিষিদ্ধ : হাদিস হলো নবীজির কথা। আর হাদিস না মানা নবীজির কথা থেকে নিজের কথা প্রাধান্য দেওয়ার নামান্তর। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আগে বেড়ো না।
আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন।’
(সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১)
নবীজির আনুগত্য যে করে না সে কাফির : হাদিস না মানা নবীজির আনুগত্য না করার সমতুল্য। আর যে নবীজির আনুগত্য করে না সে কাফির। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তুমি বলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো।
যদি তারা এতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (তারা জেনে রাখুক যে) আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসেন না।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩২)
নবীজির আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের নামান্তর : হাদিসের অনুসরণ মানে নবীজির আনুগত্য। আর নবীজির আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের নামান্তর। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের ওপর আমি তোমাকে রক্ষক হিসেবে প্রেরণ করিনি।’
(সুরা : নিসা, আয়াত : ৮০)
নবীজির আনুগত্য না করলে বিবাদ দেখা দেবে : আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। আপসে ঝগড়া কোরো না। তাহলে তোমরা হীনবল হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি উবে যাবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।’
(সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)
নবীর বিরুদ্ধাচরণে আজাব আসবে : হাদিস না মানা মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণের অন্তর্ভুক্ত। আর নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করলে আল্লাহর আজাব আসবে। আল্লাহ বলেন, ‘রাসুলের প্রতি আহবানকে তোমরা পরস্পরের প্রতি আহবানের ন্যায় গণ্য কোরো না। আল্লাহ তাদের জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে চলে যায়। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হোক যে ফিতনা তাদের গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের ওপর আপতিত হবে।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৬৩)
নবীজির আনুগত্য না করার পরিণাম জাহান্নাম : নবীজি (সা.)-এর আনুগত্য না করার পরিণাম জাহান্নাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হলো মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য আছে অপমানজনক শাস্তি।’
(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩-১৪)
নবীজির নিয়ে আসা বিধি-বিধান গ্রহণে কোরআনের নির্দেশ : মহান আল্লাহ বলেন, ‘…আর রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭)
মুমিনদের জন্য নবীজির জীবনে আছে উত্তম আদর্শ : মহানবী (সা.)-এর নবুয়তি জীবনের কথা ও কাজের সমষ্টি হলো হাদিস। আর মুমিনদের জন্য মহানবী (সা.)-এর জীবনে আছে উত্তম আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে তার জন্য।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)
মহানবী (সা.)-এর কথা-কাজ সব কিছু ওহি : মহানবী (সা.) নিজে থেকে কোনো কথা বলেননি, কোনো কাজ করেননি। যা বলেছেন, যা করেছেন সব কিছু মহান আল্লাহর হুকুমে। সুতরাং তাঁর আনুগত্য অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনি [রাসুল (সা.)] নিজ খেয়ালখুশিমতো কোনো কথা বলেন না। এটি শুধু তা-ই, যা তাঁর কাছে ওহি হিসেবে পাঠানো হয়।’
(সুরা : নাজম, আয়াত : ৩-৪)
হাদিস হলো কোরআনের ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-কে কোরআনের ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁর গোটা জীবনে কোরআনের যা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা-ই মূলত হাদিস। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমার কাছে নাজিল করেছি কোরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে, যেন তারা চিন্তা-গবেষণা করে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৪)
মহান আল্লাহ আমাদের দ্বিনি জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। আমিন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ